অসম রাজ্যে শুরু হয়েছে এনআরসি, তবে পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি নিয়ে কোনোরকম সূচনা দেওয়া হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে। তা সত্বেও এনআরসি আতঙ্কে ভুগছেন এ রাজ্যের অধিকাংশ বাসিন্দারা। এনআরসি নিয়ে ভুয়ো খবর রটে যাওয়ার পর দেখা গিয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে লাইন দিয়ে মানুষ নিজেদের আধার কার্ড, অথবা দলিল পর্চা সংশোধনের জন্য ভিড় করছেন ব্যাংক এবং বিডিও অফিস চত্বরে। কিন্তু এসকল সবই কেবল মাত্র ভুয়ো খবর রটনার ফলেই।
শুধু তাই নয়, NRC নিয়ে মানুষের মনে তৈরি হয়েছে বেশকিছু বিভ্রান্তি, ভয় ও জিজ্ঞাসা। এনআরসি নিয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যে তৈরি হওয়ার বেশ কিছু প্রশ্ন এবং তার উত্তর নিয়েই আজকের আলোচনা।
NRC কি ?
খুব সহজ ভাষায় বলতে গেলে ১৯৭১ সালের পরে পরে যারা অবৈধ ভাবে ভারতে এসেছেন, তাদের সনাক্তকরণ। তবে এই ১৯৭১টি চিহ্নিত করা হয়েছে আসামে এনআরসির জন্য। দেশের অন্য কোনো রাজ্যের ক্ষেত্রে একই সালকে চিহ্নিত করা হবে কিনা তার সদুত্তর কারোর কাছে নেই।
NRC কি সারা ভারতের জন্য?
প্রথম যখন এনআরসি অসমে শুরু হয়, তখন অনেকে ভেবেছিলেন এনআরসি শুধু মাত্র আসাম রাজ্যের জন্য। কিন্তু পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়ে দেন, গোটা ভারতবর্ষেই এনআরসি হবে।
NRC করা হয়েছে কি মুসলমানদের তাড়ানোর জন্য?
একদম না, NRC এর সঙ্গে হিন্দু, মুসলিম বা অন্য কোন ধর্মের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। শুধু শনাক্ত করা হবে বৈধ ভারতীয় নাকি অবৈধ। আসাম ১৯ লক্ষ মানুষের মধ্যে ৬০% হিন্দু বলেই জানা গিয়েছে।
এনআরসি চালু করতে সরকারের কত খরচ হতে পারে?
শুধুমাত্র আসামে NRC করতে খরচ হয়েছে ১২২০ কোটি টাকা। সারা দেশে করতে গেলে সরকারের খরচ হবে প্রায় ৪৮৮০০ কোটি টাকা।
খরচের কথা ভেবে তাহলে কি পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হতে পারে?
হতেই পারে। কিন্তু আসামে যা ধাক্কা খেয়েছে তাতে সরকার এক্ষুনি এরাজ্যে এনআরসি নিয়ে পদক্ষেপ নেবে না বলেই বিশেষজ্ঞদের মতামত। পরিকাঠামো সঠিকভাবে গড়ে তোলার পরই হয়তো হতে পারে।
তাহলে শোনা যাচ্ছে নাকি ২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে NRC চালু হবে?
একদম না। এরকম কিছুই জানানো হয়নি। যেটা হবে সেটা হল NPR অর্থাৎ জনগণনা। যা প্রত্যেক ১০ বছর অন্তর অন্তর হয়ে থাকে। একজন আধিকারিক আপনার বাড়ি আসবে, তাঁকে নিজের নাম, পরিবারের সদস্যদের নাম ইত্যাদি জানাতে হবে।
শোনা যাচ্ছে নাকি CAB করে পশ্চিমবঙ্গে NRC চালু করা হবে? CAB কি?
CAB হল Citizenship Ammendment Bill. যাতে বলা হয়েছে মুসলমান বাদ দিয়ে অন্য যে কোন ধর্মের মানুষ যারা ২০১৪ সালের ৩১ শে ডিসেম্বরের অন্য দেশ (বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, ভুটান প্রভৃতি দেশ) থেকে যারা আগে এসেছে ভারতে শুধুমাত্র ধর্মীয় কারনে বিতাড়িত তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু এই বিল এখনো পাশ হয়নি। আর এই বিল পাশ হলেও এনআরসি অবশ্যই করতে হবে। তারা যে ধর্মীয় কারনে অন্য দেশ ছেড়ে পালিয়ে এসেছে এবং ২০১৪ সালের আগেই এসেছে সেটা প্রমান করতে হবে। তার ঐ দেশের প্রমানপত্র দিতে হবে যে শুধুমাত্র ধর্মীয় কারনে অত্যাচারিত হয়ে বিতাড়িত।
CAB বিল পাশ হলেই কি অন্য দেশ থেকে আসা হিন্দুরা নাগরিক হয়ে যাবে?
না, তাদের ৬ বছর ভারতে থাকার অনুমতি দেওয়া হবে। ৬ বছর পর তারা নাগরিকেত্বর জন্য আবেদন করতে পারবেন। অর্থাৎ ওই ব্যক্তি ৬ বছরের জন্য না ভোট দিতে পরবেন, না সরকারি কিছু সুবিধা পাবেন। কেবলমাত্র দেশে থাকার জায়গা পাবেন।
এখন ভোটার কার্ড নিয়ে কি সব করতে বলছে অর্থাৎ ভোটার ভেরিফিকেশন। না করলে কি, দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে?
একদম না, আপনার যদি ভোটার কার্ডে নাম, ঠিকানা সব যেন ঠিক থাকে তার যাচাই প্রক্রিয়া। সব ঠিক থাকলে আপনাকে কিছুই করতে হবে না আর ভুল থাকলে সংশোধন করে নিন।
যদি ভবিষ্যতে NRC চালু হয় তাহলে কি কি ডকুমেন্ট লাগবে?
এনআরসির জন্য অনেক ডকুমেন্টের কথায় বলা হয়েছে আসামে হওয়া এনআরসি অনুযায়ী। যেগুলি দিয়ে সহজে প্রমাণ করা যাবে ১৯৭১ সালের আগের ভোটার লিস্ট, জমির রেকর্ড, আর কিছু হিন্দুদের জন্য ১৯৭১ সালের আগের শরনার্থী কার্ড।
উপরে বলা ডকুমেন্টগুলি আপনার কাছে না থাকলে কি হবে?
আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আপনার কাছে না থাকলেও সরকারের কাছে সব রেকর্ড আছে। নির্দিষ্ট সময়ে চাইলেই পেয়ে যাবেন।
NRC নিয়ে কোন কোন রাজনীতিক দলের কি অবস্থান?
BJP সরাসরি NRCর পক্ষে। তৃণমূল, বামফ্রন্ট, কংগ্রেস সরাসরি বিপক্ষে। অন্যদের অবস্থান নিরপক্ষে।
এখন কি কি করণীয়?
কিছুই করণীয় নেই। গুজবে কান দেবেন না। গুজব ছড়াবেন না, নিজের নিজের কাজ করুন, আনন্দে থাকুন আগে যেমন ছিলেন। ঘাবড়ে যাওয়ার মত এখনো কিছুই হয় নি।
Post a Comment